বাংলাদেশকে সহায়তা দিচ্ছে এডিবি

প্রকাশঃ নভেম্বর ২২, ২০১৫ সময়ঃ ৬:৩৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:৪২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

adpবাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। দেশের পুঁজিবাজার ও বীমা খাতের উন্নয়নে এ সহায়তা দিচ্ছে ব্যাংক (এডিবি)। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, বাংলাদেশি মুদ্রায় এডিবির ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

রোববার বিকেলে শেরে বাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও এডিবির মধ্যে এ ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডির যুগ্ম-সচিব সাইফু্দ্দিন আহমেদ এবং এডিবির পক্ষে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকো হিগোউচি স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কাজুহিকো হিগোউচি বলেন, এডিবি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এ অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।

তিনি জানান, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) জনবল বৃদ্ধিসহ সংস্থাটিকে আরো শক্তিশালীকরণ, এসইসির সব কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করা এবং বীমা খাতের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এ অর্থ ব্যয় হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন-কানুন হালনাগাদেরও প্রস্তাব রয়েছে এডিবির শর্তে।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ৮ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বলা হচ্ছে, এই অগ্রগতির জন্য পুঁজিবাজার উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাত শক্তিশালীকরণের কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে এডিবির এই অর্থসহায়তা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন ইআরডির যুগ্ম-সচিব।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি অর্জিত হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২৬টি শর্তপূরণ সাপেক্ষে চলতি ও আগামী অর্থবছরে সরকার এ ঋণ সহায়তা পাবে। মূলত ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সিএমডিপি) প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় এই ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিচ্ছে এডিবি। তবে অর্থ বাজেট সহায়তার চরিত্র অনুযায়ী, সরকার নিজের মতো করে যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যবহার করতে পারবে।

গত ৯ ও ১০ আগস্ট বাজেট সহায়তা নিয়ে এডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইআরডি কর্মকর্তাদের সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর এডিবির ম্যানিলার সদর দফতরের বোর্ড সভায় বিষয়টি অনুমোদন পায়। এর পর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এডিবির চুক্তি সই হলো। এর মধ্যে ১০ কোটি ডলার নমনীয় ঋণ হিসাবে দিচ্ছে এডিবি। পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ২৫ বছরে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। সুদ দিতে হবে ২ শতাংশ হারে।

বাজেট সহায়তার বাকি ১৫ কোটি ডলার ঋণের বিপরীতে লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদ হারের (লাইবর) সঙ্গে দশমিক ৬ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সব মিলিয়ে সুদের হার দাঁড়ায় ৩ শতাংশের বেশি। মাত্র তিন বছরের রেয়াতকালসহ ১৫ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

এডিবি এই ২৫ কোটি ডলার দেবে দুই কিস্তিতে। প্রথম দফায় ৮টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৮ কোটি ডলার ছাড় করবে সংস্থাটি। ঋণচুক্তির ১৮ মাসের মধ্যে ওই শর্তগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে সরকারকে ১৮টি শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি করতে হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। তারপরই দাতা সংস্থাটি বাকি ১৭ কোটি ডলার ছাড় করবে।

এর আগে পুঁজিবাজার উন্নয়ন কর্মসূচিতে (দ্বিতীয় পর্যায়ে) ৩০ কোটি ডলার সহায়তা দেয় এডিবি। ১৫ কোটি করে দুই দফায় ৩০ কোটি ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এজন্য পুঁজিবাজার বিষয়ক মোট ২৮টি শর্ত বাস্তবায়ন করতে হয় সরকারকে। সম্প্রতি এ কর্মসূচির কাজ শেষ হয়েছে।

ইআরডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এডিবির দেওয়া শর্তের মধ্যে পুঁজিবাজার বিষয়ক আইন-কানুন সংশোধনের বেশকিছু প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এসইসির জনবল বৃদ্ধিসহ সংস্থাটিকে আরো শক্তিশালীকরণ এবং এসইসির সব কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করা।

শর্তের মধ্যে আরো রয়েছে- বীমা খাতের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন। বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইডিআরএর জনবল কাঠামো ও মনিটরিং ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন-কানুন হালনাগাদেরও প্রস্তাব রয়েছে এডিবির শর্তে। এসব সংস্কারমূলক কাজ বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেবে এডিবি। এজন্য অতিরিক্ত ৭ লাখ ডলার অনুদান দেবে সংস্থাটি।
প্রতিক্ষণ/এডি/এআরকে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G